প্রতিদিনের ফেসবুক এবং মূল্যবোধ

প্রতিদিন যতক্ষণ ফেসবুকে থাকি ততক্ষণ বিভিন্ন ফেসবুক পোষ্টের কমেন্ট পড়তে থাকি,বিভিন্ন পোষ্ট পড়তে থাকি। এবং খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আমি বোঝার চেষ্টা করি এই প্রজন্মকে। বোঝার চেষ্টা করি সাধারণ মানুষদের কে। এবং আমি বরাবরই খুব হতাশ হই।

এই প্রজন্ম কতটা অজ্ঞ হয়ে বেড়ে উঠছে এটা ভেবে! আমি খুব হতাশ হই এই প্রজন্ম সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার জানেনা। এই প্রজন্মের কোন সুশিক্ষা নাই, জানার আগ্রহ নাই,অন্যের প্রতি নূন্যতম সম্মান নাই, শ্রদ্ধা নাই। কোন তথ্যের যাচাই-বাছাই নাই। কোন বিষয়ের পড়াশোনা নাই, স্বচ্ছ ধারণা নাই। এরা প্রত্যেকে একএকটা দলকানা হয়ে বেড়ে উঠছে! প্রচণ্ড হিংসা নিয়ে বড় হচ্ছে। আমার দাদা বলে গেছে বা করে গেছে এরা এটাই বিশ্বাসী। খুব হতাশ হই। খুব কষ্ট লাগে। এই জন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃতি ইতিহাস জানেনা! প্রতিবাদ করতে জানেনা। খুব সুক্ষ্ণভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ধর্মন্ধতার বীজ। এরা জানেনাই না ধর্ম একান্তই ব্যক্তিগত ব্যপার। একটা শ্রেনী এটাকে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। এদের ধর্ম তুরস্কের প্রেসিডেন্টের জয়ে আলহামদুলিল্লাহ স্ট্যাটাসে সীমাবদ্ধ।

এই প্রজন্ম ফ্রাস্ট্রেশন প্রজন্ম। এই প্রজন্ম ডিপ্রেশন প্রজন্ম। আসলে বর্তমানে আধুনিকায়নের নামে আমরা আরও বেশি অশিক্ষিত হচ্ছি। হারিয়ে ফেলছি নীতি নৈতিকতা। যেখানে তরুণ বয়সে আত্মবিশ্বাস, সুচিন্তা, নৈতিকতা, পরিশীল ও গবেষণামূলক মনমানসিকতা গড়ে তোলা প্রয়োজন, সেখানে আজ বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী প্রযুক্তির আসক্তি এবং নোংরা রাজনীতির প্রভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যার ফলে, শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে এই যুবসমাজ। ম্যানোপুলেট রাজনীতিতে এবং বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহারে এতো বেশি ব্যস্ত যে, তাদের মস্তিষ্কের ভেতরে মনছবি তৈরি হওয়া বা এ ধরনের মনের ব্যায়াম করার চেষ্ট একেবারেই নেই বললেই চলে। মস্তিষ্ক নিজে সক্রিয় হবার বা ভাবার আগেই চোখের সামনে স্ক্রিনে সব কিছু ভেসে উঠছে। ফলে মস্তিষ্কের সক্রিয়তাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সভ্যতা হয়ে উঠেছে আধুনিক থেকে আধুনিকায়ন। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে এক প্রকার বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছেন এই স্মার্টফোন, ল্যাপটপ নামক যন্ত্র, যার প্রভাবে সন্তানেরা এই যন্ত্রের অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হারিয়ে ফেলছে নিজেদের নৈতিকতা এবং হয়ে উঠছে বেপরোয়া।

লক্ষ্য করলেই দেখা যায়, আমাদের দেশে বর্তমান তরুণ-তরুণী শিক্ষিত হওয়ার পরেও জড়িয়ে পড়ছে অসামাজিক কার্যকলাপে। এর প্রধান কারণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় পরিমাণগত শিক্ষার লক্ষ্য পূর্ণ হলেও ঘাটতি রয়েছে গুণগত শিক্ষায়। তাদের কেবল পুঁথিগত বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। যার ফলে, তারা মাদক এবং অন্যান্য খারাপ কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে। হয়ে পড়ছে মেধাশূন্য। হারিয়ে যাচ্ছে নৈতিকতা, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নৈতিকতা এবং মানবিক গুণাবলী গড়ে তুলতে পরিবারকে এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখা উচিত। কেননা প্রতিটি মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষা পরিবার থেকে শুরু হবে আর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা তাদের অভিভাবক হিসেবে সততা, দায়িত্ববোধ, স্বচ্ছতা, নৈতিকতা শিক্ষা দিবেন। শিক্ষার্থীদের শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত করলে এই মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র নিয়ে তাদের কোনো সম্যক ধারণা থাকবে না। শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার বড় দায়িত্ব শিক্ষকদেরই কাঁধে। কারণ তারা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির ভালো-মন্দ ব্যবহার এবং প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে দিকনির্দেশনা দিতে হবে শিক্ষকদের। সাথে নোংরা রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে বাবা-মাকে সতর্ক হতে হবে।

সর্বোপরি, প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের নৈতিক, মানবিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে জাগ্রত করতে হবে শিক্ষার্থীদের মানসে। আর এটা কারও একার নয়, বরং সবার দায়িত্ব। পরিবার, সমাজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলকে একত্রিত হয়ে সমকালীন বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে হবে। কারণ এই প্রজন্ম জানেনা এরা কি করবে। জানেনা কি করা উচিত।

সুশিক্ষিত করে তুলতে না পারলে ভাবতে হবে প্রচুর ভাবতে হবে এই প্রজন্মের হাতে দেশ কতটা নিরাপদ?

Leave a Reply