প্রেম এমন একটি অনুভূতি, যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা, মায়া, বিশ্বাস, দায়িত্ববোধ, কাণ্ডজ্ঞান এবং সহমর্মিতা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রেমের প্রকৃত গভীরতাকে উপেক্ষা করে, একে কেবল অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আর শারীরিক আকর্ষণের মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। এভাবে প্রেমকে হালকা করে ফেলছি। এতে হয়তো সাময়িক মুক্তির অনুভূতি আসে, কিন্তু দিনশেষে এর মূল্য কী?

আগে মানুষ বিয়ের পুর্বে প্রেম নিয়ে ভাবত, কিন্তু এখন বিবাহিত নারী-পুরুষও প্রেমের সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। হয়তো কেউ সহকর্মীর সঙ্গে, কেউ ফেসবুকে পরিচিত কারও সঙ্গে, কেউ বা পুরনো বন্ধুর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই মনে করেন, সংসার সামলানোর পাশাপাশি একটুখানি “গোপন রিফ্রেশমেন্ট” তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। কিন্তু এই মনোযোগ, সময়, ভালোবাসা, যা আপনি বাইরের কারও প্রতি দিচ্ছেন, তা সরাসরি আপনার সঙ্গীর জীবনে শূন্যতার সৃষ্টি করে।
আপনার সঙ্গী—যিনি দিনরাত সংসার সামলাচ্ছেন, আপনার প্রতি বিশ্বাস আর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ—তার হৃদয়ে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়, তা কোনো না কোনোভাবে পূরণ হবেই। হয়ত সেই শূন্যতায় প্রবেশ করবে পাশের ফ্ল্যাটের কেউ, অথবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিত কেউ। মনে রাখুন, আপনার সঙ্গীও মানুষ, তারও অনুভূতি রয়েছে। তিনি যদি প্রতিদিন আপনাকে সান্ত্বনা দিয়ে, আপনার ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করেন, তবু তার হৃদয়ের শূন্যতা দিন দিন গভীর থেকে গভীরতর হয়।
তাই নিজেকে অতিরিক্ত চালাক ভাববেন না। এই অবহেলার মাশুল একদিন আপনাকেই দিতে হবে, এবং এর প্রভাব পড়বে আপনার সন্তানদের ওপরও। নিজ পরিবারকে গুরুত্ব দিন, সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত হন। মন থেকে দুষিত প্রেমের আকাঙ্ক্ষা দূর করুন। বিবাহিত জীবনকে ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ আর পারস্পরিক বিশ্বাস দিয়ে সমৃদ্ধ করুন। পরিবারকে ভেঙে কেউ কখনো সুখী হতে পারেনি। বেইমানীর পরিণাম সবসময়ই দুঃখ আর একাকিত্ব।
যে সম্পর্ক গড়তে বছরের পর বছর সময় লাগে, তা ভাঙতে কয়েক মুহূর্তই যথেষ্ট। তাই বৈধ সম্পর্কগুলোকে মূল্য দিন, তাদের ভালোবাসুন। দাম্পত্য জীবনকে সুখময় আর প্রেমময় করে তুলুন। নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখুন, ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন, এবং পরিবারের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটান। সুখের সন্ধান বাইরে নয়, নিজের ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে।